চৈত্রের দুপুরে, বাঁকুড়ার এক গ্রামে রোদের তাপে ফাটছে রাস্তা।
একজন মা বাজারের ঝুড়ি নামিয়ে হিসেব করছেন—ছেলের পড়াশোনার খরচ কীভাবে চালাবেন।
হঠাৎ তিনি মনে করেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকাটা এবার বেশি কাজে লাগবে।
ভোট আসছে — তার কাছে ভোট মানেই সাহায্যের হাত।
এই এক ভোটেই হয়তো তার সংসার একটু বাঁচবে।
আর ঠিক এইভাবেই গ্রাম বাংলার প্রায় ৮৭% মানুষ ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন ২০২১ সালে।
এত উচ্চ অংশগ্রহণ বলে দেয় —
গ্রামে ভোট মানে রেশন-ভাতা-চিকিৎসা-অনুদানের সরাসরি বাস্তবতা।
আবার, একই সময়ে, দক্ষিণ কলকাতার একটি কফিশপে দুই বন্ধু চাকরির বিজ্ঞপ্তি খুঁজে চলেছেন।
তারা অবাক—বছরের পর বছর পড়াশোনার পরও অফার লেটার হাতে আসছে না কেন!
এদের কাছে ভোট মানে হতাশার প্রতিবাদ।
কিন্তু শহরের রাস্তায় ভোটের ভিড় ছিল কম —
মোটে প্রায় ৬২% মানুষ ভোট দিয়েছেন।
কারণ এখানে ভোটের প্রতিশ্রুতি জীবন বদলানোর চেয়ে
ভবিষ্যৎ বদলানোর দাবি।
এর মাঝেও উঠে আসে উত্তরবঙ্গের গল্প।
কোচবিহারের বাসস্ট্যান্ডে একজন রিকশাচালক ফিসফিস করে বলে—
“রাজ্যের মানচিত্রে আমরা আছি, কিন্তু সিদ্ধান্তে নেই।”
উত্তরবঙ্গের মানুষ আকাঙ্ক্ষা করেন
প্রশাসনিক গুরুত্ব + উন্নয়ন + পরিচয়ের স্বীকৃতি।
সরে গেলে পৌঁছে যাওয়া যায় জঙ্গলমহলের কোমরভাঙা বাস্তবে।
পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার বহু যুবক প্রতিদিন অন্য রাজ্যে শ্রমিক হতে রওনা দেন।
তাদের জীবনে ভোট মানে—
“এবার কেউ আমাদের দিকেও তাকাক।”
এরা চায়
কাজ, শিল্প, রুটির নিশ্চয়তা।
যখন ব্যালট বাক্স খোলা হলো—
বাংলার গল্প সংখ্যায় লেখা হয়ে গেল।
এই সংখ্যার আড়ালে দাঁড়ানো ছিল চার ধরনের ভোটার—
একই রোদে পুড়ে, ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা বুকে।
▪ গ্রাম ভাবল — “যারা আমাদের ভাত দেয়, তাদেরই দেব ভোট।”
▪ শহর ভাবল — “যারা আমাদের চাকরি দেবে, তাদেরই দেব ভোট।”
▪ উত্তরবঙ্গ ভাবল — “যারা আমাদের সম্মান দেবে, তাদেরই দেব ভোট।”
▪ জঙ্গলমহল ভাবল — “যারা আমাদের বাঁচার সুযোগ দেবে, তাদেরই দেব ভোট।”
এ যেন একটা রাজ্য, কিন্তু চারটি স্বপ্ন।
২০২৬ এখন সেই স্বপ্নগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পরীক্ষা।
গ্রাম কি আরও কল্যাণ চাইবে?
শহর কি আরও অধিকার চাইবে?
উত্তরবঙ্গ কি অস্বীকৃতি ভেঙে গর্জে উঠবে?
জঙ্গলমহল কি উন্নয়নের শপথ না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না?
রাজনীতির মূল প্রশ্ন একটাই —
সব গল্প কি একদিন একই মুখে হাসবে?
না কি
ভোট শেষ হলেও
বাংলা থাকবে চার দিকে চার রকমের ক্ষুধা, চার রকমের আওয়াজ নিয়ে?
কারণ
এক বাংলার ব্যথা অন্য বাংলার ওষুধ নয়।
এবং আজকের ভোটার —
বুঝে গেছে,
কে শুধু কথা ছাড়া কিছু দিতে পারে না,
আর কে সত্যি তার দরজায় এসে খোঁজ নেয় —
তার জীবনের।