মহিলা ভোটার: বাংলার নীরব রাজনেত্রী


বাংলার নির্বাচনী ভূগোল আজ এক নতুন সত্য দেখছে—
বাড়ির ভেতরের নীরব সিদ্ধান্তই ঠিক করছে রাজনীতির ভবিষ্যৎ।

কারণ রাজ্যের মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই এখন মহিলা,
এবং তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই সক্রিয় ভোটার—
মহিলা ভোটদানের হার পুরুষদের সমান বা বেশি

দেবশ্রী বাউরির মতো অসংখ্য মহিলা—
যাঁরা রেশন লাইনে দাঁড়ান ভোরবেলায়,
স্কুল থেকে ফেরার পথে মেয়ের নিরাপত্তার দায় নেন,
তাঁরাই আজ বাংলার নীরব রাজনেত্রী।


১. ভাতের নিশ্চয়তা, রাতের নিশ্চিন্ততা

দেবশ্রীর কাছে রাজনীতি মানে—
পেটে ভাত, মাথায় ছাদ,
এবং রাতে দরজার সাঁকো নিশ্চিন্তে লাগানোর অনুভব।

গ্রামে সন্ধে নামলেই রাস্তা নীরব,
শহরে ভিড়েও অস্বস্তি লুকোনো—
নিরাপত্তা দুই জায়গায়ই আলাদা,
কিন্তু উদ্বেগের রং এক।

তিনি চান—
বাড়ির ভাত যেমন আছে তেমনই থাকুক,
আর ভয়ের ছায়া যেন না আসে।


২. নিজ নামে টাকা: নিজের মত বেছে নেওয়ার অধিকার

কিছু টাকার সহায়তা এখন তার নামেই আসে
যা দিয়ে মাসের শেষে ছোটখাটো প্রয়োজন মেটাতে পারেন।

টাকার অঙ্ক ছোট হলেও
মর্যাদার অঙ্ক বড়।

“আমি চাইলে নিজের মতো কিছু ঠিক করতে পারি।”

এই অনুভূতিটাই বদলে দিয়েছে—
গৃহিণী থেকে সিদ্ধান্ত-নির্মাতা হওয়ার পথ।

গ্রামে সেই টাকা সংসারে সোজাসুজি সাহায্য,
শহরে তা নতুন স্বাধীনতার সিঁড়ি।

একটি স্ত্রী–মায়ের পরিচয়ের পাশাপাশি
অর্থনৈতিক সত্তা–র আবির্ভাব।


৩. শহর বনাম গ্রাম — উভয়ের স্বপ্ন আলাদা, গুরুত্ব সমান

কল্যাণী শহরে থাকেন:
বাচ্চার পড়াশোনা, ভবিষ্যৎ চাকরি—এটাই তাঁর আপস না-করা দাবি।

মেহনাজ গ্রামে:
আজকের নিশ্চয়তা, চিকিৎসা, রেশন—
সেগুলোই তাঁর প্রাথমিক চাহিদা।

দু’জনেই ভোট দেন
যা তাঁদের জীবনের বাস্তবকে ছুঁয়ে যায়
একজনের অগ্রাধিকার ভবিষ্যতের উন্নতি,
অন্যজনের বর্তমানের স্থিরতা—
কিন্তু দুই সিদ্ধান্তই সমান যুক্তিসঙ্গত।


৪. আইন-শৃঙ্খলা — না বলা উদ্বেগের বড় অংশ

দেবশ্রী হয়তো কখনও জোরে বলেন না—
কিন্তু প্রতিটি কটূদৃষ্টি,
প্রতিটি রাতের আতঙ্ক,
প্রতিটি অপমান মনে থেকে যায়।

তিনি জানেন—
যেখানে মেয়েদের পথ খোলা,
সেখানে গণতন্ত্র সত্যি।

এই নীরব বিচারই ভোটের সময়
সবচেয়ে জোরে শোনা যায়।


৫. ভোটের দিন — আঙুলের চাপে সংসারের ভবিষ্যৎ

ভোটের সকালে
দেবশ্রী বুথের দিকে হাঁটেন।
কেউ তাঁকে হাততালি দেয় না,
কোনো ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তার দিকে ঘোরে না।

কিন্তু বুথের ভেতরে—
তাঁর এক আঙুল বদলে দিতে পারে
একটি রাজ্যের দিকনির্দেশ।

এতটাই নিঃশব্দ
এতটাই শক্তিশালী
মহিলা ভোট।


📊 তথ্য বক্স: বাংলার মহিলা ভোটার

(ঝটপট তথ্য যা গল্পের সত্যতা বলে) সূচক / বিষয় তথ্য

বাংলায় মোট ভোটার সংখ্যা ≈৭.৫৮ কোটি

মহিলা ভোটার ≈৩.৭৬ কোটি (পুরুষ ৩.৮৮ কোটি)

প্রতিটি ১০০০ পুরুষ ভোটারে মহিলা ৯৬৮ মহিলা

মহিলা ভোটদানের হার (২০২১) ৮১.৭% (পুরুষের তুলনায় সামান্য বেশি)


শেষ কথা

বাড়ি ফিরে দেবশ্রী আবার ধুতে বসেন—
বাইরের রাজনীতি যেন কোথাও নেই।

তবুও জানেন—

যেদিন শত-শত দেবশ্রী
নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে
নিজের মতো ভোট দেন,
সেদিনই বাংলার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়।

বাংলার আগামী দিন
উচ্চকণ্ঠের মিছিল নয়—
এই নীরব, কিন্তু দৃঢ় মহিলা ভোটারদের হাতেই


Leave a Reply